গাজা শহর নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় ইসরাইল, বিশ্বজুড়ে সমালোচনা

চ্যানেল

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা তাদের সামরিক বাহিনীকে গাজা শহর নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। শুক্রবার এ খবর প্রকাশের পর দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

জেরুজালেম থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে।

গাজা যুদ্ধে প্রায় দুই বছর পার হলেও যুদ্ধবিরতির জন্য নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়ছে। এতে ২ কোটিরও বেশি ফিলিস্তিনিকে দুর্ভিক্ষের হাত থেকে বাঁচানো এবং ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হাতে ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্ত করা সম্ভব হবে।

এদিকে, ইসরাইলের প্রতিপক্ষ হামাস লড়াই চালিয়ে যাওয়ার এই পরিকল্পনাকে ‘নতুন যুদ্ধাপরাধ’ বলে সমালোচনা করেছে।

অপরদিকে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র জার্মানি এক ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ হিসেবে দেশটিতে সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি স্থগিত করেছে। জার্মানির আশঙ্কা, এসব অস্ত্র গাজায় ব্যবহার করা হতে পারে। জার্মানির এই পদক্ষেপকে হামাসের জন্য পুরস্কার বলে নিন্দা জানিয়েছেন নেতানিয়াহু।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানিয়েছে, হামাসকে ‘পরাজিত’ করার জন্য নতুন অনুমোদিত পরিকল্পনা অনুযায়ী সেনারা গাজা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেবে এবং যুদ্ধবিহীন এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মানবিক সহায়তা বিতরণ করবে।

নেতানিয়াহু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এর এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমরা গাজা দখল করব না বরং গাজাকে হামাসের হাত থেকে মুক্ত করব।’

তিনি আরো বলেন, গাজায় নিরস্ত্রীকরণ হলে ও শান্তিপূর্ণ বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা হলে তা জিম্মিদের মুক্ত করতে সহায়ক হবে এবং ভবিষ্যৎ হামলার ঝুঁকি কমাবে।

ইসরাইল ১৯৬৭ সালে গাজা দখল করেছিল, তবে ২০০৫ সালে সেনা ও বসতি সেখান থেকে সরিয়ে নেয়।

নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, মন্ত্রিসভা পাঁচটি নীতি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজার নিরস্ত্রীকরণ এবং এমন একটি বিকল্প বেসামরিক প্রশাসন গঠন, যা হামাসও নয়, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও নয়।

পরিকল্পনাটি বিশ্বজুড়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। চীন, তুরস্ক, বৃটেনসহ বিভিন্ন আরব দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস একে ‘বিপজ্জনক উত্তেজনা’ বলে সতর্ক করেছেন। তার মতে, এটি ইতোমধ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে থাকা লক্ষাধিক ফিলিস্তিনির জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলবে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ রোববার এ বিষয়ে বৈঠক করবে।

এদিকে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎস ইসরাইলে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, নতুন পরিকল্পনা বৈধ লক্ষ্য অর্জনে কীভাবে সহায়ক হবে তা বোঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

ইসরাইলে এ পরিকল্পনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ জানিয়েছেন, সেনারা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে।

জিম্মিদের পরিবারের প্রধান সংগঠন ‘হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম’ এই পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, এটা জিম্মিদের ‘পরিত্যাগ’ করার শামিল।

সংগঠনটি জানিয়েছে, ‘গত রাতে মন্ত্রিসভা এমন একটা বেপরোয়া পদক্ষেপ নিয়েছে, যা জিম্মি, সৈন্য ও পুরো ইসরাইলি সমাজের জন্য বিপদের কারণ হবে।’

২০২৩ সালের হামলায় জিম্মি হওয়া ২৫১ জনের মধ্যে এখনো ৪৯ জন গাজায় আছেন, যাদের মধ্যে ২৭ জন মৃত বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনারা।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলি হামলা আরও বাড়লে, সেনারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অভিযান চালাতে পারে যেখানে জিম্মিদের রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

কিছু ইসরাইলি অবশ্য এতে সমর্থন জানিয়েছেন। ইহুদিদের একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ছাত্র চেইম ক্লেইন (২৬) বলেন, ‘গাজা নিয়ন্ত্রণে নিলে তারা হামাসকে পুরোপুরি না হলেও বড় অংশে নির্মূল করবে।’

ইসরাইলি সেনারা গত মাসে জানিয়েছিল, তারা গাজা উপত্যকার ৭৫ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।

গাজার বাসিন্দারা আরও বাস্তুচ্যুতি ও হামলার আশঙ্কায় ভীত। ছয় সন্তানের মা মাইসা আল-শান্তি (৫২) এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘তারা আমাদের কখনো দক্ষিণে যেতে বলে, কখনো উত্তরে। এখন আবার দক্ষিণে পাঠাতে চায়। আমরা মানুষ, কিন্তু কেউ আমাদের শুনছে না, দেখছে না।’

হামাস শুক্রবার বলেছে, গাজা দখল করা ও এর বাসিন্দাদের সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাটি একটি নতুন যুদ্ধাপরাধ। সংগঠনটি সতর্ক করেছে, এতে জিম্মিদের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে এবং ইসরাইলকে চরম মূল্য দিতে হবে।

জাতিসংঘ সমর্থিত এক জরিপে সতর্ক করা হয়েছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, চলতি বছর গাজায় অপুষ্টিতে অন্তত ৯৯ জন মারা গেছে, যা আসল সংখ্যার চেয়ে কম হতে পারে।

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, গাজার ওপর বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার সময় ১৯ বছর বয়সী এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন।

সংস্থাটির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেছেন, ‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মানুষের মাথায় ভারি ত্রাণের প্যাকেট পড়ে প্রতিদিনই আহত ও প্রাণহানি হচ্ছে।’ তিনি আরও জানান, ত্রাণ ফেলার জায়গায় ভিড় এবং পদদলিত হওয়ার কারণে প্রায়শই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

বাসাল আরো জানিয়েছে, শুক্রবার গাজাজুড়ে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন।

ইসরাইল সম্প্রতি গাজায় কিছু ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিলেও জাতিসংঘ বলছে, এর পরিমাণ এখনো প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ইসরাইলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ২০২৩ সালে হামাসের হামলায় ইসরাইলে নিহত হয়েছে ১ হাজার ২১৯ জন। সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে এএফপি এই হিসাব দিয়েছে।

আপনার মন্তব্য

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Space for ad

অনুসরন করুন

সর্বশেষ খবর

স্বত্ব © ২০২৫ চ্যানেল এইচ নিউজ

Design & Developed : Rose IT BD