অবশেষে সাত দফা অঙ্গীকারনামার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো এই খসড়ায় বলা হয়েছে, স্বাক্ষর করার পর সনদের বৈধতা নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দল আদালতে প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
চূড়ান্ত খসড়ায় মোট ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) সংযুক্ত রাখা হয়েছে। খসড়ায় নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ সালের নির্বাচন ও পরবর্তী ধারাবাহিক রাজনৈতিক ঘটনা ও হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট, যা আগে অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, চূড়ান্ত ভাষ্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে এবং এতে সবার মতামতের প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। দলগুলোকে আগামীকাল ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে স্বাক্ষরকারীর নাম পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
সনদ বাস্তবায়নে আইনি বাধ্যবাধকতার প্রস্তাব থাকলেও তা চূড়ান্ত খসড়ায় রাখা হয়নি। পরিবর্তে বাস্তবায়নের জন্য চারটি পদ্ধতি সুপারিশ করা হয়েছে—গণভোট, অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ এবং বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ।
আগের খসড়ায় ৮ দফা অঙ্গীকার থাকলেও চূড়ান্ত খসড়ায় তা কমিয়ে ৭ দফায় সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বিষয়গুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই বাস্তবায়ন করবে।
প্রাথমিক খসড়ায় সনদের অবস্থানকে সংবিধানের ওপরে প্রাধান্য দেওয়ার প্রস্তাব ছিল, যা জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির দাবি ছিল। তবে বিএনপিসহ কয়েকটি দল এর বিরোধিতা করায় চূড়ান্ত খসড়ায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন বলা হয়েছে, সনদটি সংবিধানে ‘তপশিল আকারে বা যথোপযুক্তভাবে’ সংযুক্ত করা হবে, এবং স্বাক্ষরকারী রাজনৈতিক দলগুলো এর বৈধতা বা প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
প্রসঙ্গত, গত ২২ আগস্ট পর্যন্ত দলগুলোর মতামত নেওয়া হয়। পরে সমন্বয় করে ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত খসড়া স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে নতুন প্রস্তাবও উঠে আসে। রোববার এ বিষয়ে আবার বৈঠক করার কথা রয়েছে।